দিনটি ছিল ২২ মার্চ ২০২২। রাত ২টা ৫০ দিকে ঘুম ভাঙ্গলো, সাথে কাকে যেন মনে পড়ছে প্রচন্ড, তাই মনে পড়া মানুষকে নিয়ে মোবাইল ডায়েরিতে দুইটুকরো করে লেখা জমা আছে, কিন্তু মন চাইছে মেসেজটি পাঠাতে।
ফটো: এই আই (AI) থেকে
এমবি নেই, এমার্জেন্সি ব্যালেন্স ট্রাই করলে মেসেজ আসে sorry you have already borrowed emergency Blance. বিকাশে টাকা নেই, অনেকদিন চেক করা হয়নি, তাই মনে হলো হয়তো কিছু আছে কিন্ত ফলাফল দেখি ৫ টাকা মাত্র। হচ্ছে না কোনভাবে, মন সায় দিচ্ছে মেসেজটি এখুনি পাঠাতে পারলে ভালো হতো। জীবনে প্রথম ক্যাম্পাস লাইফে তিনটা বাজে ঘুম থেকে উঠছি, বাইরে সুনসান নিরবতা, কয়েকটা লোক এখনও ঘুমায় নি, ঘুমায়নি বলতে হয়তো কাজ করতেছে, আওয়াজটি পাশের সদ্য তোলা বিল্ডিং থেকে আসতেছে । অনুমান করলাম রাতের মিস্ত্রি, তাই একটু অভয় পেলাম বের হওয়া যাবে আমিও, ওয়াফাই use করবো দুরের কটেজের । একটা গরম কাপড় পড়ে বের হলাম, সাথে মনে পড়ে গেল এখানকার মানুষ মারা গেলে যেখানে সেখানে কবর দেয়, পরে ভাবলাম এসব কী ভাবতেছি বিজ্ঞানমনস্ক মন নোংরা হয়ে যাবে, তাই পরিস্থিতি অবজার করলাম গেইটে দাড়িয়ে চোর ডাকাত ছিনতাইকারী নাই তো, আর থাকলে আমার মোবাইল নিতে পারে সর্বোচ্চ, তাহলে তো মেসেজই দেওয়া হবে না, আবার বামে ডানে তাকিয়ে নিশ্চিত হলাম ছিনতাইকারী নাই। তাই নির্দিদ্বায় বেরিয়ে পড়ি, আসতে আসতে থেকে দ্রুত পা বাড়ায়, কেউ দেখে ফেললে উল্টা আমাকে চোর মনে করবে, কে দেখবে পুলিশ!আসলে পুলিশদের তো দেখায় উচিত এত রাতে কারা বের হয়, না হয়, যাক এসব, আমি এগোলাম আমার উদ্দেশ্য, ভাবলাম হটস্পট অন করা দরকার, পৌছার সাথে সাথে ডাটা কাজ করুক, সত্যি সত্যি গন্তব্যে পৌঁছার আগে ওয়াইফাই কানেক্ট হয়ে গেল, স্বস্তি পেলাম। মোবাইল ডায়েরিতে গিয়ে মেসেজটি কপি করলাম, কপি হচ্ছে না, মোবাইল স্লো হচ্ছে, হ্যাং হচ্ছে, অবশেষে কপি শব্দটি আসলে কপি করে ফেলি, ওইদিকে ফেসবুকে মেসেজ শো হচ্ছে না, ঘুরতেছে আর ঘুরতেছে, মানে লোড হচ্ছে, তারপর দেখি এখনও ফেসবুকে সবুজ বাতি দেখা যাচ্ছে তারমানে এরা এখনও এক্টিভ, ফেসবুক চালায়, এত রাতে ফেসবুক, না ডাটা অন করে ঘুমিয়ে পড়ছিল এরা, এটা ওদের ব্যাপার বলে তাকে খোঁজলাম, অনেকদিন কথা বলে নি নিচেরদিকে পড়ে আছে, সাথে গ্রুপ মেসেজ বন্ধুদের মেসেজ দেখা যাচ্ছে, মেসেজ খুব নিচের দিকে আর ব্রাউজ হচ্ছে না, নেট স্লো হয়তো, সামনে আরো একটু গেলাম ডাটা আরো একটু কাজ করুক এই ভাবনা থেকে, সেই ফাঁকে এটাও করি,মানে নামটা সার্চ করি say দিলাম আসে না, saye দিলাম কার কারটা যেন এসে যায় তার নামটা শো হচ্ছে না, তারপর সার্চ না করে ধীরে ধীরে মেসেজ স্ক্রল করে খোঁজি, অবশেষে পাওয়া গেল, "করোব নিখা", ডায়রি থেকে কপি করাটা paste করি, তারপর সেন্ড করি, কিন্তু দেখি যে অর্ধেক মেসেজ, রিমুভ করলাম, আবার মোবাইল ডায়েরিতে গিয়ে ভালো করে all কপি করে send করলাম। এভাবে মিশন সাকসেস করে রুমে আছি এবং মনস্থির করি আজকে প্রচুর পড়বো, এই টাইমে কোনদিন পড়া হয় নি, এখন তো দেখি ঘুমও আসতেছে আবার, ভোর ৪টা ১১, পড়বো, না ঘুমাবো দেখা যাক।
মেসেজটি কি ছিল :
প্রিয়
ভার্চ্যুয়াল জগতে দৈনিক কথাবার্তা বলতে গিয়ে ধুলোবালিতে ভরে গেছে সাহিত্যচর্চা বা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যাবস্থা এই রকম করে বুদ্ধিজীবিদের মতো শুরু করতে চাই নি আমি, এমনকি ইচ্ছের বিরুদ্ধে ও নয়। দার্শনিকের মত শোনালেও সত্যিটা হলো, বুদ্ধি পরামর্শ চিন্তা ধ্যান ধারনার প্রতিফলন হিসেবে লেখালিখি করে নিজের বিশ্বাসকে চরিত্র দাঁড় করিয়ে খুব বেশী লেখার সক্ষমতা রপ্ত করতে পারে নি আজও। তবে আমার কেমন জানি মনে হলো কঠিন ও সংকট মুহূর্তে তোমাকে দুইটুকরো চিঠি লিখলে কেমন হয়?
খুব বেশি মনোযোগ ছাড়া আমি এখন পড়তেছি ডেল কার্নেগি সমগ্র,,, বইয়ের পছন্দের একটি লাইন হলোঃ দ্রুত চিন্তা করে সেই জ্ঞান চমৎকারভাবে পরিবেশন করাই দক্ষতার লক্ষন।
আমি তপু পড়া শেষ হলে রবিসন ক্রুশো পড়িও,,সাথে পড়তে ভুলো না, গ্রামসি, সৌফির জগৎ কিংবা মিশেল ফুকোর যেকোন একটি বই। না পড়িলে খুব বেশী রাগ করব না,,,
ভালো থেকো। ভালো কাটুক তোমার দিনগুলো।
ইতি-
@ ধীমান ত্রিপুরা ( নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী)
0 Comments