বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছেলে আছে, পকেটে টাকা নেই এটা নিয়ে লজ্জা নেই, এটা গোপন রেখে চলে অনেকে কথাবার্তা গরিব হিসেবে উপস্থাপন করে।
ফটো: এই আই (AI) থেকে
কিন্তু দুইবেলা জন্য তারা লুজিং করবে না, হোটেলে খাবার সার্ফ করবে না, ফুডপান্ডায় খাবার ডেলিভারি দিবে না, তারা পকেটশুন্য হয়ে থাকবে।
তাদের বিশ্বাস, তাদেরকে ৪/৫ বছর কেউ টাকা চালাবে, তারপর চাকরি নিয়ে পরিশোধ করবে। তারা যেকোন ধরনে কাজ করবেনা। চাকরি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের গাড়ি ভাড়া নেই, কিংবা চাকরি আবেদনের জন্য হাতে টাকা নেই, অথচ তারা কাজ করে টাকা ইনকাম করবে না। অধিকাংশই তারা মনে করে তাদের পরিবার তাদেরকে সাপোর্ট দিতে পারছেনা, কিংবা সমাজ কেউ তাদেরকে সাপোর্ট দিচ্ছে না।
রাষ্ট্র কেন তাদেরকে সাপোর্ট দিচ্ছে না, রাষ্ট্র কেন তাদেরকে গরীব করে রেখে দিয়েছে? এটি কম সংখ্যক স্টুডেন্ট ভাবে, কারন এটির সাথে অধিকার জড়িত।
কারণ অধিকারের সাথে রাজনৈতিক জড়িত, তারা এটির মুখোমুখি হতে ভয় পায়। নিজের কেন টাকা নেই, ভালো খাবার নেই, ভালো পোশাক নেই এই প্রশ্ন অনেক সময় তারা করে না, করতে পারে না, করতে চায় না।
কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংস্কৃতি বেড়িয়ে পরিবর্তনের একটি ধারা দেখা যায়। আমি আদিবাসী অনেক ত্রিপুরা ছোটভাইদেরকে দেখি শহরে ফুডপান্ডায় খাবার ডেলিভারী দিচ্ছে, রেষ্টুরেন্টে কাজ করতেছে, কেএফসিতে খাবার সার্ফ করতেছে। সারাদিন ক্লাস করে, কাজ করে সন্ধ্যাদিকে ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আড্ডা দিয়ে রাতে পড়তে বসছে, ল্যাপটপ খোলে এসাইনমেন্ট থিসিস করতেছে। সাথে সামাজিক সংগঠন, রাজনীতিতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতেছে, বেড়ে যাচ্ছে বিদেশমুখী শিক্ষার্থী মোটা বেতনের স্কলারশিপ নিয়ে আরো উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ।
শহরে কাজ করে টিকে থাকার কৌশল সংগ্রাম ধীরে ধীরে রপ্ত করতেছে। শুধু তাই নয় আমি এমন ত্রিপুরা মেয়েকেও দেখছি " প্রথম আলো, ডেলি স্টার কিনে পড়া পেপারকে গাম দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেট বানিয়ে টোকাই বসতি ছেলেদের মাধ্যমে খাবারের হোটেল ও ফটোকপি দোকানে সরবরাহ করে ৩ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতি মাসে ।
একজন তঞ্চঙ্গ্যা মেয়েকে চিনি, যিনি বাড়িতে যায় না, বাড়িতে খাবারে সংকট বলে। ভার্সিটি হলের খাবার ডাল নিয়ে কেউ হাসাহাসি পোস্ট করলে তিনি নিরবে কাঁদে, কারন বাড়িতে ঐ খাবারটা ও নেই তার। তিনি শুরু করে দিয়েছে খাবার এর ব্যবসা, সুপার শপে শুক্রবার / শনিবার জব। রমজান মাসে পার্লার এর জব।
আমি সাম্প্রতিক কয়েকজন ত্রিপুরা ছেলেকে দেখছি হোটেলে গিয়ে ১৫/২০ টা সিভি দিয়ে আসতে। তারা ম্যানাজারকে গিয়ে চাকরী দিতে বলি নি, গিয়ে বলছে কাজ দেন আমি কাজ পারি, আপনাকে লাভবান করায় দিতে পারি।
আমি আরো অবাক হয়েছি এক ত্রিপুরা ছোট ভাই কম্পিউটার দোকান গিয়ে বলতেছে আমি টাইপিং পারি, প্রিন্ট আউট করতে পারি, ছবির কাজ জানি, আমাকে রাখলে আদিবাসী আসবে, কাস্টমার বাড়বে, তাৎক্ষণিক কাজ পেয়ে গেল তিনি।
১ মাস আগে একটা ছোট ভাইকে দেখছি তার মেধাটা অন্যরকম। কোচিং সেন্টারে গিয়ে বলতেছে আমাকে টাকা দিতে হবে না, আমার ২ টি ফ্রি ক্লাস করে দেখুন, তারপর সিদ্ধান্ত নেন আমি কেমন?
আমি আরো একজন ছোট ভাইকে চিনি যিনি ব্যাংকে শিক্ষা লোন নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট করে কাজ করে টাকা পরিশোধ করতেছে।
আমি একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বান্ধবীকে চিনি " ক্যান্টনমেন্টের বস্তির এলাকার তার বাড়ি,, যেখানে প্রতিদিন ভার্সিটি শাটল ট্রেন থামে,, তিনিও নেমেও যায় তার গন্তব্যে,, কিন্তু ঐ বস্তির ঘরটি তার,, কেউ বুঝে ফেলবে তাই ধীরে ধীরে হাঁটে,, ট্রেন চলে গেলে ঢুকে পড়ে। জানলে অনেকে সহযোগিতার করতে চাইবে বা করুনা দেখাবে কিন্তু সে চায় না এসব,, সেই সাজাইতে চায় নিজের পৃথিবীকে তার মত করে।
"বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক প্রতিভাবান বন্ধু ভার্সিটির গনরুমে টাঙ্গিয়ে রেখেছে একটি চিরকুট " আমার রুমটা নোংরা বসতির মতো হতে পারে কিন্তু আমি জানি সবচেয়ে সুন্দর রুমের পৃথিবীটা কোথায়"
@ ধীমান ত্রিপুরা ( নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী)
0 Comments