ত্রিপুরারা পৃথিবীতে বিলুপ্ত হওয়া জনগোষ্ঠীর নয়, পৃথিবীতে মানব আগমনে তালিকা, অস্টালোপিথেকাস হতে শুরু করে জাভা, পিকিং, নিয়ান্ডারথাল, রোডিশীয়, ক্রোমেনিয়ন মানবদের বিভিন্ন প্রজাতির সাথে প্রতিকুল কঠিন পরিবেশে survive করে আজোও হোমি সাপিয়েন্স যুগেও ত্রিপুরারা টিকে আছে। ইতিহাসের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায় আমারা জোরালোভাবে বরং ইতিহাস দাড় করাইতে পারি, এই ভারতীয় উপমহাদেশে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর থেকে বাকিরা উৎপত্তি হয়ে অন্য জাতিগোষ্ঠিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে, অতি উৎসাহ কিংবা আত্মতুষ্টির জন্য আমি এটি বলে নি, এটা আপনারাও কমবেশী সবারই জানার কথা, বিশেষ করে আর্য অনার্য ইস্যুগুলো, ভারতীয় ভুখন্ডে কৌশলে নিম্নবর্গের ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়া , কিংবা বুদ্ধিবৃত্তি সুপিরিয়র ইতিহাস চর্চা বিতর্ক ইস্যুগুলোতে আমাদের ত্রিপুরাদের যথেষ্ট কথা বলার জায়গায় আছে,, তাই আমি বিন্দুমাত্র হতাশ হয় না।
সভ্যতার উত্থান পতন স্বতঃসিদ্ধ নিয়মে পৌষাক হারিয়ে যাওয়া, কিংবা অনুশীলন করতে না পারা, নতুবা পারিপার্শ্বিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হারিয়ে যাওয়া একটি জনগোষ্ঠীকে দেখে আমি বিন্দুমাত্র হতাশ হয় না এই ভেবে আমরা মানবজাতির সভ্যতার ধারহ এবং বাহক।
আমি এই কারনে হতাশ হয়না আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নিশ্চয়ই ২/৩ জন ছিল,, কিন্তু এত বছর পরও তারা টিকে আছে, এবং টিকে থাকার কৌশল তারা শিখে ফেলছে, আমি উলঙ্গ সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকার কথা বলছি না, আমি হতাশ হয়না আমাদের সমাজে মার্টিন লুথার কিং, মাও সেতু, লেনিন,নেলসন ম্যান্ডেলার,আইনস্টাইন,বিলগেইটস কিংবা অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, মানুষদের মতো আর্বিভাব ঘটে নি বলে, সবসময় রেনেসাঁস বিপ্লব, কিংবা রুশ বিপ্লব হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে আমি কখনোও হাতাশ হয় না, আমরা যদি আরো লক্ষ্য করি বাংলাদেশের মুসলিম বাঙ্গালী ইতিহাস কথা তাহলে দেখতে পাবো তাদের ইতিহাস কতটা জগন্য, কতটা আইডেনটি ক্রাইসিস এবং নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে এরা ভুল পরিচয় দিচ্ছে, বাঙ্গালী ইতিহাসকে যদি সারমর্ম আকারে দেখি তাহলে দেখতে পাব: মুসলীম বাঙ্গালীরা তাদের ইতিহাস নিয়ে খুবই শংকিত,,বিশেষ করে তাদের উৎপত্তি ও ইতিহাস। ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ী বাসিন্দা সকল জাতিগোষ্ঠীকে অনার্য আর বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠীকে আর্য নামে আখ্যায়িত করা হয়। অনার্যরা ( ত্রিপুরা) প্রকৃতি পুজায় বিশ্বাসী ,, তারপর আর্যদের প্রভাবে অনার্য ( ত্রিপুরাদের একটা অংশ বলা যেতে পারে ) অনেক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বাঙ্গালী গোষ্ঠী হিন্দু হয়ে যায়। মোর্য, গুপ্ত,গৌড়, পাল ( কিছু হিন্দু বাঙালি বৌদ্ধ হয়) ,, সেন পর্যন্ত বাঙ্গালীদের মধ্যে মোটামুটি হিন্দু বজায় থাকলো।
হিন্দুদের ৪ টি বর্নের মধ্যে নির্যাতিত নিম্ন বর্ন হিন্দু বাঙ্গালীরা সুলতান মুঘল আমলে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রচুর মুসলিম হয়ে যায়। মুসলিম বাঙ্গালী ও হিন্দু বাঙ্গালী নিয়ে পরবর্তীতে বিট্রিশরা প্রচুর রাজনীতি করে। ফলে একই বাঙ্গালী হয়েও ধীরে ধীরে সম্পর্কের ফাটল ধরতে শুরু করে।
হিন্দু বাঙ্গালীরা তাদের ভাষা,,ধর্ম,, মাছের ভাতে বাঙ্গালী, পৌষাকে শাড়ী,, ধুতি,, নিয়ে গর্ব করতে শুরু করে অন্যদিকে ধর্মান্তরিত মুসলিম বাঙ্গালী পরিচয় সংকটে ভোগে। মেয়েদের পর্দা পরা,,নামের সাথে বাংলা পরিবর্তে আরবী দিয়ে নাম রাখা ইত্যাদি।
দ্রুত গতিতে আমদানী করা আরবী ভাষা গ্রহন, নামকরণ, ধর্মান্তরিত হলেও তারা ভুলতে পারি নি মাতৃভাষা বাংলাকে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে।
শুধু ভাষা কালচার পৌষাকের জন্য আবারও আটকে যায় মুসলিম বাঙ্গালীরা হিন্দু বাঙ্গালীদের সাথে। এদিকে হিন্দুরা পুজায় দেবীকে শাড়ি পড়ানো হয়,,,, ফলে মুসলিম বাঙ্গালীরা নারীকে পোষাক পরিবর্তন বা শাড়ি বর্জন এবং পর্দার প্রাধান্য,,, পর্দা না পড়লে নাস্তিক ধর্ম বিশ্বাসী এমন বিভিন্ন টার্ম শব্দ যুক্ত করে নারীদেরকে অবমাননা করে উপস্থাপন করতে থাকে।
ধীরে ধীরে মুসলিম বাঙ্গালীরা পৌষাক বর্জন বা পরিবর্তন করার পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষকে বয়কট করতে শুরু করে। অনেক মুসলিম বাঙ্গালী বাংলা ভাষাকে বয়কট করতে চাইলেও শেষে এসে আর পারি নি। যারা এখনও দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু টিচারদের উস্কানিতে ভাষা আন্দোলনের কারনে বাংলা ভাষাকে বয়কট করতে পারি নি মুসলিম বাঙ্গালীরা।
এদিকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম এই টানাপোড়েনে পরিচয় সংকটে ভোগে মুসলিম বাঙ্গালীরা। আর বর্তমানের অনেক মুসলিম বাঙ্গালীদের মধ্যে বাঙ্গালী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করে না,, তাদের দাবী অনেকটাই এরকম আর্য অনার্য দুই জাতির বিবাহের মিশ্রণের উৎপত্তি হিন্দু বাঙ্গালী পরিচয় ধারন করলে ইসলাম ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হবে যা অনেকাংশই মধ্যেবিত্ত মুসলিম বাঙ্গালী যারা সংস্কৃতি ও ধর্মকে সমন্বয় করে পরিচয় দিতে চাওয়াদের সাথে সাংঘর্ষিক। )
এই ধরনে অনেক বৈচিত্র্য ইতিহাস আমরা দেখতে পাব।
সেই তুলনায় আমারা পিওর, তাই কখনো আমি হতাশ না আমাদের ত্রিপুরাকে নিয়ে। সবাই কাজ করে যাচ্ছে, কেউ নিরবে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ নিজের জন্য, বা সমাজের জন্য, তাই আমরা যারা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়তেছি "আফাকরাউ" , আমি বলবো আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই ত্রিপুরাদের স্বতন্ত্র আইডেনটিটি ক্রাইসিস নিয়ে। আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা, আর সেটি লিখে শেষ করতে পারবো না।
ধীমান ত্রিপুরা
বি.এস.এস(অনার্স),এম.এস.এস ( নৃবিজ্ঞান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments