Deman Tripura

একটি অপরাধ জগৎ

সব ক্রাইমের ফাইল রেকর্ডভুক্ত হয়ে গোয়েন্দার হাতে আছে একেবারে খুব বেশি ছোটখাটো ক্রাইম ব্যতিত দেশের ছোট-বড় সব ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্রাইম তাদের তালিকায় আছে।

তবে কিছু কিছু বড় ক্রাইমের ডাটা নিরাপত্তার স্বার্থে  মুছে দিতে হয়।কারণ এই বড় ক্রাইমকে দিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যায়।তাকে ধরলে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হওয়া যায়। অস্ত্র ব্যবসা হতে শুরু করে বড় শিল্পপতির কাছেও কাজে লাগে তারা। বাজারে তাদের চাহিদা প্রচুর।

আবার কিছু ক্রাইম রয়েছে যাদেরকে তিলতিল করে তৈরি করতে হয়।বিষাক্ত রত্নের মতো।তাদেরকে সময়মতো ব্যবহার করলে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

অতিথি পাখির মতো কিছু ক্রাইম রয়েছে।যাদের অপরাধ হলো এই টাইপের- সুযোগ পেলে এক-দুইবার কাজ করে  বাকি জীবন আরামে কাটাবে।

কিছু ক্রাইম আছে দারিদ্র্য ও অনাথ।তারা হয় ভয়ংকর। কারণ তারা বিশ্বাস করে, পৃথিবীই তাদের একমাত্র আপন।যেটাকে তারা একই সাথে স্বর্গ ও নরক ভাবে।


                              
                                                                              ফটো : এআই থেকে বানিয়ে নেওয়া


আবার কিছু অপরাধী হয় ভদ্র। মুখোশে ঢাকা। এদের মুখে শুদ্ধতা, চোখে রাষ্ট্রভক্তি।কিন্তু ভেতরে এক বিশাল অন্ধকার। সেদিন প্রধানমন্ত্রী অফিসে একজন ওসিকে ডাকা হলো।

দেশের সকল পুলিশ অফিসারের ফাইল স্টাডি করে মনে হলো—এই ওসি সাহেবই কাজটি পারবে। তিনি ভয়ংকর সব ধরনের কাজ করতে পারেন।

মাদক, ইয়াবা, অস্ত্র কারো পকেটে কিংবা গাড়িতে ঢুকিয়ে, যাকে তাকে আটকাতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করে না। কারণ তিনি ‘সিস্টেমের’ পুরোনো খেলোয়াড়।

আজকে ওনাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাকার কারণ—একটি স্পেশাল ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় ঘোরানো। ঘটনাটা একেবারে তুচ্ছ, কিন্তু মিডিয়া কাভারেজ করে ফেলেছে।কোনোভাবেই ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না ।

ঘটনা?

একটি ফাঁসির রায় আটকানো লাগবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ওসি সাহেবের সামনে রাখা হলো দুটি প্রস্তাব:

১. কাজটি করতে পারলে ৫০০ কোটি টাকাসহ দেশের বাইরে সেটেল করে দেওয়া হবে। অথবা

২. সরাসরি স্পেশাল এসপি পদে প্রমোশন।

ওসি সাহেব হাতে সময় পেলেন ১২ দিন ১৮ ঘণ্টা।

ওসি সাহেব নিজের অপারেশনের নাম দিলেন:

“Silent  Killer”

এই নাম শুনেই বোঝা যায়, কাজটা শুধুমাত্র আইনি নয়।চাতুর্যের, কলা-কৌশলেরও। তিনি তার দপ্তরে বসে সাজালেন তিনটি বিশাল পরিকল্পনা। প্রতিটি পরিকল্পনা ছিল ১০ পৃষ্ঠার মতো দীর্ঘ।

প্লান A : Money and Compromise

প্লান B : Analysis and Study

 প্লান C : Artificial Crisis

 প্লান A সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ৩ দিন।

প্লান B ১৫ দিন।

প্লান C ১১ দিন।

কিন্তু তিনি ঠিক করলেন,  প্লান A দিয়ে কাজটি শেষ করবেন।

B ও C প্রয়োগ করার দরকারই হবে না।এই আত্মবিশ্বাস তার রয়েছে। ওসি সাহেব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন অফিসে এসে এসআইকে বললেন—

“সব ক্রাইমের ফাইলকে দুটি ভাগে আলাদা করো।একটি টাকা, আরেকটি মতাদর্শ।” টেবিলভর্তি ফাইল একে একে স্টাডি করতে করতে ওসি বলে উঠলেন—

“এই ক্রিমিনালকে নিয়ে আসো।”

এসআই: “ওকে স্যার।”

ওসি যোগ করলেন: “আর শোনো—আগে কয়েকটি ঘুষি আর দুটি কারেন্ট শক দিবা।”

এসআই: “জ্বী স্যার।”

এসআই ভিতরে গিয়ে আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে আনে।

কেন খুন করেছে—সে কিছুই বলে না।

এসআইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

এরপর তাকে ওসি স্যারের সামনে নিয়ে আসা হলো।

ওসি ধমক দিয়ে বলেন:

“পশু নাকি!মানুষ তো। হাতকড়া পড়ানো কেন? খোলে ফেলুন!”

“ওনার এই অবস্থা কেন? এত রক্ত—মারামারি করে এসেছে কোন গ্রুপের সাথে?”

এসআই: “না স্যার, পুরোনো কেস। একটু ধোলায় দিয়েছি।”

ওসি: “ধোলায় দেওয়ার লিখিত অনুমতি পেয়েছ?”

এসআই: “না স্যার।”

কলিং বেল বাজানো মাত্র লিটন সাহেব আসলেন।

ওসি: “লিটন, চা আর বিস্কিট দিন তাকে।”

আসামির জন্য চা আর বিস্কিট নিয়ে এলেন লিটন সাহেব।

ওসি ধমকের স্বরে বললেন:

“কি অবস্থা করছ দেখছ? আসামি মারা যাবে তো! যাও, সবাই বের হও এখান থেকে।”

সামনে বসা আসামির উদ্দেশ্যে ওসি জিজ্ঞেস করলেন—

“এই পথে কেন? টাকা? না মতাদর্শ?”

(আসামিকে উত্তর দেওয়া সুযোগ না দিয়ে আবারও) 

“আচ্ছা বলুনতো কি এমন  কাজ?

যেটি করে সর্বোচ্চ টাকা পাওয়া যায়?

খুন? না প্রাণী বস্তু পাচার?”

আসামি বললো:“ কেন? আপনারদের কাছে তথ্য নেই? ফাইল খোলে দেখেন, সব পাবেন।

নতুন ওসি মনে হয়—ক্রিমিনাল ফাইল পড়ার সময় পান না বুঝি।” এক ঘণ্টাও পেরোয়নি ওসির অফিসে, তখনই বেজে ওঠে ফোন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে।

“হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম স্যার।

Any update: ফখরুল সাহেব?”

ওসি: “Sir, I think and believe that operation be success.”

অপর প্রান্ত:“ Good, very good. আমি জানতাম আপনি পারবেন।

ওকে আরো মানসিকভাবে প্রস্তুত করো—তোমার সামনে বসা লোকটাকে।”

ওসি আশ্চর্য হন না—এইটা অনুমেয়।

ফোন রেখে বললেন:

“সরি। সামনে বসা লোকটিকে—চা নিন।”

আসামির সঙ্গে তিনি যে রকম ভদ্রতা, খাতির দেখাচ্ছেন—তা দেখে যে কেউ বুঝবে, এই ওসি সাহেবের  এক অন্যরকম দক্ষতা আছে।

আসামি: “কি জানতে চান বলুন।”

ওসি: “আপনার সম্পর্কে এই ফাইলে যা লিখেছে—সবই ভুয়া।

সারমর্ম দেখে যা বুঝলাম।

আপনি ৫টি খুনের আসামি এবং ৪টি ট্রাই টু রেইপ।আরো অনেক হাবিজাবি।"

আসামি: “ঠিকই তো আছে। আপনি ভুল পেলেন কোথায়?”

ওসি: “আপনি বললেন না, টাকার জন্য এই পথে।

কিন্তু আপনার সম্পত্তির টাকার কথা এখানে কিছু লেখা নেই ।

তাই মনে হলো, সবই ভুয়া।”

আসামি: “তাহলে এবার আমি বলি, আপনি যোগ করেন টাকার কথা।”

ওসি: “তা প্রয়োজন নেই।

এখন বলুন, কত টাকা লাগবে আপনার?”

আসামি: “মানে?”

ওসি: “কষ্ট করে একটু দরজা লক করে আসুন।”

ওসি: “শুনেন, আপনাকে এখান থেকে বের করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে টাকা খেয়ে আসছি।

এখন আপনার কত টাকা লাগবে, বলুন?”

আসামি: “১০০ কোটি।”

ওসি: “ফাঁসি মঞ্চের আসামি—তাও এত এমাউন্ট? কম কত?”

আসামি: “দশমিক পয়সাও না।”

ওসি: “আপনার দ্বারা হবে না, আমার অন্য কাউকে লাগবে।”

কলিং বেল বাজালে এসআই ঢুকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেল আসামিকে।

                                               (২)

সরকারি মেডিকেলের একজন প্রফেসর ডা. একটি কিডনি ওপর গবেষণা করতে চায়।

তার লাগবে একজন জীবন্ত মানুষ।

তাকে সহযোগিতা করতে হবে।

মানুষটা যা তা নয়, লাগবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

ওসি সাহেব ফ্লাইওভারের নিচে থাকা একজন পাগলকে নিয়ে গেলেন।

তার কিডনি ওপর গবেষণা করে ডাক্তার ক্যারিয়ার সফল করলেন।

যেহেতু এটি জীবন্ত মানুষের ওপর এক্সপেরিমেন্ট, তাই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য

আগের আসামিকে “দেশবাসীর জন্য আত্মসমর্পণকারী কিডনি দাতা” রূপে প্রচার করলেন।

দেশবাসী নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ দিতে থাকলেন।

আসামির প্রতিও ক্ষোভ কমে গেল।

এভাবে ওসি সাহেব আসামিকে বাঁচালেন, এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কয়েক কোটি টাকা পেলেন।

রাত নেমে এসেছে।ওসি সাহেব জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে বলেন—

“এই রাষ্ট্রে খুনি, নায়ক, ডাক্তার, অপরাধী—সবই গড়ে তোলা যায়।

কে বাঁচবে, কে মরবে—তা ঠিক করে ‘ডিল’।

আর আমি শুধু খেলোয়াড় নই, আমি বোর্ড।”


ধীমান ত্রিপুরা
বি.এস.এস (অনার্স), এম.এস.এস (নৃবিজ্ঞান) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

1 Comments