Deman Tripura

নৃবিজ্ঞান কি শেখায়! কেন পড়বেন নৃবিজ্ঞান? সন্তানকে নৃবিজ্ঞান শেখাবেন কেন!

     

এককথায় দিয়ে যদি শুরু করি তাহলে বলবো" নৃবিজ্ঞান মানবিক হতে শেখায়, তাই এটা এতটা চ্যালেন্জিং অনেক বড়ো নৃবিজ্ঞানীরাও  ভিতরে ভিতরে অনৃবৈজ্ঞানিক চর্চা করে বসে থাকে। স্বয়ং প্রমান মেলে "বিশ্ববিখ্যাত  নৃবিজ্ঞানী  'ম্যালোনোস্কির"  গোপন ডায়রী।


                                                                   ফটো: এই আই (AI)থেকে

নৃবিজ্ঞান যেহেতু সারাবছর মানুষকে নিয়ে  অধ্যয়ন  করতে হয়,  তাই তার  এই অধ্যয়নের সংস্পর্শে এসে কোন মানবগোষ্ঠী  যাতে ক্ষতি না হয় তা জোরালোভাবে নজরদারি করার নৈতিকতার কথা নৃবিজ্ঞানের বলা হয়।।

মানুষকে তার কালচারের ভিতর দিয়ে যত্ন করে, মুল্যাবান মনে করে অধ্যয়ন করতে হবে। এটি আরো  শেখায় তার পৌশাক, ভাষা, খাদ্যভ্যাস ও বিশ্বাসব্যবস্থাকে কে শ্রদ্ধা করতে হবে, আবার এটাও শেখায় মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখো,,, আমার ধর্ম কালচার সংস্কৃতি দিয়ে নয়,,,

এটি শেখায়  ধর্ম হবে বৈচিত্র্য " ধর্ম হলো একটি বহুমাত্রিক ধারনা। তাই এটিকে নাস্তিক আস্তিক দুই বৃত্তান্তে সীমাবদ্ধে রেখে অধ্যয়ন করলে ধর্ম সংকুচিত হতে পারে। 

এটি যেমন কোর্স হিসেবে  মেডিকেল শেখায়, একই সাথে সাহিত্যের ধরন ও  ভিজুয়াল শেখাবে। 

আলোচ্য বিষয়বস্তু হিসেবে বর্তমান পাশাপাশি অতীতে গিয়ে শেখায় " মানুষ ও মানুষের সাথে সম্পর্কিত সকল উপাদানসমুহ অথাৎ কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রানীজগতে আজকের মানুষ নিজের অবস্থান দখল করতে পেরেছে এবং দখল করতে গিয়ে  সেই কি কি  সমস্যায় সম্মুখীন হয়েছে এবং টিকে থাকার জন্য পরিবেশের কোন কোন উপাদান তাকে সহযোগিতা করছে ইত্যাদি। 

যেহেতু নৃবিজ্ঞান বহুমাত্রিক আলোচনা করে তাই এটি শেখায় ডারউইন ও বিবর্তনবাদীদের মতে, মানুষের আজকের এই অবস্থান এর অবদান হলো বিবর্তনের ধারা। মানুষের এই বির্বতনের ধারাটি জৈবিক ও পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। অথাৎ সকল জীব একই সমজাতীয় থেকে উৎপত্তি হওয়া সত্বেও তাদের মধ্যে জৈবিক ও পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে ছোট ছোট শারীরিক মানসিক  বিভিন্ন কার্যকলাপের পরিবর্তন ঘটে, ঘটায় যা দীর্ঘসময়ের পর তা বিশাল ব্যবধান তৈরি করে।  আর এই বিবর্তনের ধারাটি বৈচিত্র্যভাবে বিবর্তিত হওয়ার কারনে বর্তমান পৃথিবীতে এত বৈচিত্র্য জীব ও প্রানীর আবির্ভাব।  আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব থেকে মানুষ হয়ে উঠার পেছনে যে প্রক্রিয়াটি রয়েছে সেটিকে ডারউইন মানুষের বিবর্তন বলে আখ্যায়িত করেন। লক্ষ কোটি বছর আগে জীবের বিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলো বাদ দিয়ে প্রাইমেট বর্গ থেকে মানুষ হয়ে উঠা যে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো - মস্তিষ্ক বৃদ্ধি,  সোজা হয়ে হাঁটতে পারা, হাতিয়ার তৈরি,  ধারাবাহিকভাবে উন্নত হাতিয়ার তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন, ভাষা, দলবদ্ধ হয়ে বসবাস,  সংস্কৃতি বিকাশ ইত্যাদি। 

 নৃবিজ্ঞানের এই  বহুমাত্রিক আলোচনা থেকে  কয়েকটা মাত্রিক আলোচনায়  পৃথিবীর উৎপত্তি এবং জীবের উৎপত্তি সম্পর্কে কি পড়ায় বা শেখায় একটু বলি: 

পৃথিবী উৎপত্তি : পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করা হয় ইউরেনিয়াম পদার্থ পরীক্ষা মাধ্যমে, নির্দিষ্ট বছরের পর ইউরেনিয়াম সিসে পরিনত হয়। আর পন্ডিতরা ইউরেনিয়াম মাটি খুঁড়ে পাওয়ার পর সেই পদার্থে কতখানি সিসে পরিনত হয়েছে তা হিসাব বের করে পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করছেন,  জেনছেন প্রায় ৫০০ কোটি বছর বলে, এই পৃথিবী হয়ে উঠার গল্পকে নৃবিজ্ঞান পড়ায় এভাবে " মহাবিস্ফোরনে ফলে সূর্য থেকে ছিটকে পড়ল একটি জলন্ত টুকরো। ছিটকে পড়া এই জলন্ত টুকরো ঘুরপাক খেতে লাগলো সূর্যের চারপাশে।  ঘুরপাক খেতে খেতে এই টুকরো আরো ছোট ছোট কতগুলো টুকরোতে ভাগ হয়ে গেলো। মানে ১০ টুকরো হয়ে গেলো।  আর ছোট ছোট সব টুকুরোগুলো বিকিরণের মাধ্যমে দিনের পর দিন ঠান্ডা হয়ে জমাট হয়ে আসতে লাগলো। এরই একটা টুকরো নাম হয়েছে  আমাদের এই পৃথিবী। এবং ঘনীভবনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর উপরিভাগ বা ভু-ত্বক। এই ঘনীভবন সময় নেয় প্রায় ২০০ কোটি বছর। এর পর বায়ুমন্ডল ও জলবায়ু....... ()

আর জীবের উৎপত্তি হয়েছে পানি থেকে পৃথিবীর সৃষ্টির প্রায় ১০০ কোটি বছর পর। সেই আদিকোষ বা জীবের নাম হলো প্রোটোপ্লাজম। জল তৈরি হয়েছে দুটি ভাগ হাইড্রোজেন এবং এক ভাগ অক্সিজেন  H2o থেকে। কিন্তু প্রোটোপ্লাজম তৈরি হয়েছে অনেক রকম মৌলিক জিনিস  মিশেল খেতে খেতে।  এই প্রোটোপ্লজম পানিতে বদলাতে বদলাতে  মাছ ও বিভিন্ন বৈচিত্র্য জীবে পরিনত  হলো, মাছ বদলাতে বদলাতে উভচর, উভচর বদলাতে বদলাতে সরীসৃপ,  সরীসৃপ বদলাতে বদলাতে স্তন্যপায়ী,  স্তন্যপায়ী বদলাতে বদলাতে শিম্পাঞ্জি,  গেরিলা বনমানুষ তারপর আজকের মানুষ। এটি কীভাবে বদলায় কারো চোখে পড়ে না, এই বদলানো ব্যবধানটা বুঝা যায় হাজার হাজার বছর পর। হাজার হাজার বছর বেঁচে থেকে একজন মানুষের পক্ষে এই বদলানো দৃশ্য বদলে যাওয়ার দৃশ্য দেখা কখনো সম্ভব না। ফলে ফসিলের ওপর প্রত্নতত্ত্ব এর ওপর এর নির্ভর করতে হয় এই বদলে যাওয়ার ইতিহাস জানার জন্য.......()

এই ধরনে বিশাল জ্ঞান কান্ডের নিয়ে মাুনষের এই চলমান প্রক্রিয়াকে অধ্যয়ন করার জন্য আপনি নৃবিজ্ঞান কয়েক পাতা উল্টিয়ে দেখতে পারেন। 

তবে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী  হিসেবে  আমি শিখলাম " বিভিন্ন গ্রন্থ, লেখক,তাত্ত্বিক,  দার্শনিক,   ও মানুষের  কাছে ছোট ছোট নৃবিজ্ঞানের জ্ঞান / চিন্তা থাকতে পারে, সেখান থেকে বেছে বেছে আমাদেরকে  নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানগুলো নিতে হবে। অনৃবিজ্ঞানগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে আলোচনা সুবিধার্ধে এটি অধ্যয়ন করে আমাদেরকে আজীবন ভাল মানুষ হওয়ার সংগ্রাম করে যেতে হবে ।


ধীমান ত্রিপুরা 

বি.এস.এস (অনার্স), এম.এ (নৃবিজ্ঞান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

1 Comments

  1. "তবে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি শিখলাম " বিভিন্ন গ্রন্থ, লেখক,তাত্ত্বিক, দার্শনিক, ও মানুষের কাছে ছোট ছোট নৃবিজ্ঞানের জ্ঞান / চিন্তা থাকতে পারে, সেখান থেকে বেছে বেছে আমাদেরকে নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানগুলো নিতে হবে। অনৃবিজ্ঞানগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে আলোচনা সুবিধার্ধে এটি অধ্যয়ন করে আমাদেরকে আজীবন ভাল মানুষ হওয়ার সংগ্রাম করে যেতে হবে " inspired word

    ReplyDelete