Deman Tripura

আদিবাসী গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ে ভুল ধারনা ভেঙে পড়ুক


যারা গামেন্টস এর worker হিসেবে  শহরে আসে, হয় তারা পরিস্থিতি স্বীকার, নয় তাদের জীবনের গল্প খুব বেশী আনন্দদায়ক নয়। যেখানে আদিবাসী ছেলেরা  বিভিন্ন পেশায় involved হতে অনীহা বা বিমুখ সেখানে আদিবাসী মেয়ে নিজেরদের কালচার বলয় ছাড়িয়ে, শহরে এসে ঠায় খোঁজা, শ্রমিক বা worker হিসেবে কাজ করা  গল্পগুলো খুবই করুন ও বেদনাদায়কও বটে তাদের জন্য । 


                                                                                        ফটো: এই আই (AI) থেকে 

বিধবা, স্বামীহারা, পারিবারিক ক্রাইসিস, চাষাবাদে ভূমিহীন শেষ সম্বল হিসেবে তারা এসে জুটেছে এই worker বা শ্রমিকের কাজে। আমাদের আদিবাসী মেয়েরা ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজার,  লাইনম্যান,  ফ্লোটিং অফিসার হতে শুরু করে অনেক টপ লেভেলে GM, DM মার্চেন্ডাইংজিং পদে,  আছে। আমি তাদের কথা বলব না, আমি শুধু গামেন্টস worker বা শ্রমিকদের  কথা বলব আজকে। শহরাঞ্চলের গার্মেন্টস worker হিসেবে আদিবাসী নারীর জীবন নিয়ে অনেক লেখালেখি, গবেষনা, থিসিস মনোগ্রাভ, টকশোর আয়োজনের কোন শেষ নেই। সেখানে উঠে এসেছে এক করুন অবস্থা।  তবে আজকে আমার এই গল্পে তাদেরকে সমাধানের পথ দেখাতে না পারলেও তাদের হয়ে কষ্টগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছি সেটি আংশিক শেয়ার করবো  একটুখানি আপনাদের সাথে যদিও আপনারা জানেন। যেহেতু তাদের এই সমস্যা আর্থিক এর সাথে রিলেটেড তাই সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা পরিবর্তন না ঘটিয়ে সমাধানের পথ দেখানো সম্ভব না বলে, অন্তত আমি তাই মনে করি। বইপুস্তক এর কয়েক পাতা আর্টিকেল পড়ে, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখলাম,  বিশাল এই শহরে গার্মেন্টস worker আদিবাসী নারীরা, আসা মাত্রই যে সমস্যা ভোগে তা হলো বাসস্থান। অধিকাংশ সময়ে তারা কারখানার পাশাপাশি ও নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে থাকার চেষ্টা করে এবং সেভাবে বাসা ও খোঁজার চেষ্টা করে। এমনকি এভাবে বাঙ্গালীদের থেকে আলাদা থাকাকে তারা কিছুটা হলেও  নিরাপদ  কম্ফোটেবল ফিল করে।  কেননা অনেক সময় তারা নিজেদের ঐতিহ্যের পোশাক, ভাষা  ও প্রিয় খাবার রান্না করতে গিয়ে বাঙ্গালি থেকে অনেক কটু , খোচাঁ  কথা শুনতে হয় নীরবে।

এখানে তাদের কাজের ক্ষেত্রে যদি বলি।  সকাল ৮ থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সারাদিন খাটুনি দেয়। এমনকি বাড়তি বেতনের জন্য ওভার টাইম করলে, কখনো কখনো রাত ৯ টা ১০ টা বেজে যায়। আর সকালে ঠিক টাইমে তিনদিন যদি কর্মস্থলে পৌছঁতে লেট হয়, তাহলে ১ দিনে বেতন কাটা। কারখানার বিভন্ন আইনের অনুযায়ী ছুটি ভোগ করা, বনাস পাওয়া, চিকিৎসা সেবা,  মাতৃত্বকালীন ছুটি সময়মতো না পাওয়া বা পেতে হয়রানির হলেও ধরাবাঁধা নিয়মে ঠিকই তাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়।

যেকোন সময় তো চাকরির ছাটাই হতে পারে এই worker দের। ফলে নতুন পরিবেশে চাপের মধ্যে কাজ করতে হয় অনেক সময়  রোবট বা মেশিনের মত। বিনোদন করার সময় খুবই কম পায় তারা। বৈসু পূজা উৎসবে প্রিয়জনকে মিস করলে ও একটা সময় অভ্যাসে পরিনত হয়ে ফোন করা হয় না আর কাউকে খুব বেশী ,,, নিজেকে ভালবাসে আত্নকেন্দ্রীক হতে শেখে,, চারপাশে যা দেখে সেটিকে বাস্তবতা হিসেবে ধরে নেয়,,,,, উন্নত চিন্তার সাথে   ব্যাক্তিগত সমস্যাকে রাষ্ট্রীয় সমস্যায় কাতারে ফেলে চিন্তা করতে না পারলে ও ধীরে ধীরে রপ্ত করে এই নারীরা, তাকে খাবারের জন্য থাকতে হবে এই শহর প্রবাসীগুলোতে,,,  স্কেল গ্রেড না বুঝলেও তারা সহজে প্রকাশ করে হাসিমুখে তাদের বেতনে কথা,,, 

তাদের এভারেজ বেতন ১২ হাজার টাকা। অনেকে বাড়িতে খরচ পাঠায় বা সঞ্চয় করে। আবার কেউবা বাড়তি সঞ্চয় নিয়ে সংসারে পা দিতে যায়।

তবে অনেক সময় এটাও দেখা মিলে মাস শেষে বাড়তি সঞ্চয় নিয়ে বিনোদন করতে চাওয়া, একটু ঘুরতে চায়,  শহরকে ভালবাসতে চায়,  জানতে চায়,খাপ খেতে চায়। সংসার কল্পনা করে। কিন্তু এগুলো জন্য দরকার তাদের উপযোগি লাইফ পার্টনার। যা অধিকাংশ সময় তারা স্বজাতি আদিবাসীর মধ্যে খোঁজে পায় না। ফলে অনেকে ভূল করে ফেলে বেজাতির সাথে মিলেমিশে। আর আমাদের  সমাজও গার্মেন্টস worker দের ভালো চোখে দেখে না। একটা সময় এ অবহেলিত নারীরা  কেউ ধৈর্য ধরে সফল হয়ে, কেউবা ছিটকে পড়ে, কেউবা এটাকে জীবনের সংগ্রাম মনে করে  টাকা কামিয়ে গ্রাম বা নিজের শহরে গিয়ে জীবনযাপন শুরু করে দেয়। আর কেউবা ছোট করে সংসার পাটিয়ে  শহরকে আঁকড়ে ধরে থাকে নতুন স্বপ্ন নিয়ে, সন্তানকে এই পথে আসতে না হয় সেই নজর দিয়ে।

ফলে মাঝে মাঝে এই বিলাসিতার শহরের ভীড়ে  টিকে থাকা, তাদের  অনেক চ্যালেন্জিং হয়ে দাড়ায়। 

পরিশেষে এইটুকুই বলতে ভুলবো না, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, তারা কোন বেকার বা worker নয়, তাদেরকে শ্রমিক বা  worker বলে অসম্মান না করে আমি বলব কর্মী। এবং আদিবাসী সমাজের এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে মুল্যায়ন করব। একদিন আমাদের আদিবাসী সমাজে পরিবর্তন আসবেই, এবং এ পরিবর্তন  সমাজে ছড়িয়ে পড়বে, এই প্রত্যাশা রাখি। 


ধীমান ত্রিপুরা 

বি.এস.এস (অনার্স), এম.এ (নৃবিজ্ঞান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


Post a Comment

1 Comments

  1. আসলেই স্যার যারা গার্মেন্টস চাকরি করে ওদের সহজে কেউ ভালো চোখে দেখে না..... বিশেষ করে মেয়েদের কোনো মেয়ে যদি গারমেন্স চাকরি করে ওদের নিয়ে সমাজে নানা কথা হয়..... মানুষের ধারণা এমন কেন জানিনা.... ওরা তো আর চুরি ডাকাতি করছে না..... নিজে পরিশ্রম করে নিজে টাকা ইনকাম করে খাচ্ছে.... নিজের জীবন কে নিজের মতো সাজাতে চাচ্ছে.... কেউ বা ফ্যামিলির খরচ বহন করতে ইনকাম করছে..... এইখানে ওঁদের নিয়ে এত আলোচনা কেন হয় আল্লাহই ভালো জানে.... আসলেই ওদের দৃষ্টিকোন বদলানু দরকার.... সব চাকরিজীবি দের কে সমান চোখে দেখা দরকার....

    ReplyDelete