Deman Tripura

নৃবিজ্ঞানের ভয়ংকর কলঙ্কের দাগ


 ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগে মানব অধ্যায়নের নৃবিজ্ঞানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা চেহারা কেমন? বুঝার সুবিধার্থে  সরল অর্থে  নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানকে দুইভাগে বিভক্ত করি।  একটি হচ্ছে (পিছিয়ে পড়া) জাতিকে জাগানো আর অন্যটি হচ্ছে পিছিয়ে পড়া জাতিকে শাসানো। প্রথমে শাসানো দিকটা যদি খেয়াল করি - 

                                                                                    ফটো: এই আই (AI) থেকে 

যদিও বলা হয় নৃবিজ্ঞানীরা উন্নত ও অনুন্নত উভয় সমাজকে নিয়ে গবেষণা করে,  কিন্তু বেশীভাগ দেখা গেছে যে নৃবিজ্ঞানীরা অনুন্নত সমাজকে নিয়ে গবেষণা জন্য ব্যস্ত থাকে। যদি আমরা আমেরিকার ও ইউরোপের কথা বলি তাহলে দেখতে পাবো যে সেখানকার নৃবিজ্ঞানীরা তাদের নৃবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া,  পলিনেসিয়া ও মেলানেশিয়ার অঞ্চলকে যাদের অর্থনৈতিক মান ছিল খুবই নিম্নমানের।  ঐ সকল সমাজে নৃবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন বসবাস করে সেই সমাজে সংস্কৃতি ভাষা রীতিনীতি বিশ্বাস,  তাদের শাসন ব্যাবস্থা, জীবনযাপনের দূর্বলতা,  সরলতা সামগ্রিকভাবে রপ্ত বা আয়ত্ব করে একটি বিস্তৃত বই বা গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করে যেটিকে নৃবিজ্ঞানের ভাষায় এথনোগ্রাফিক বলা হয়।  অথাৎ এই গবেষনার বইটিতে এমন কিছু লিপিবদ্ধ করা আছে,  যা অধ্যয়নের মাধ্যমে লেখকের ঐ গবেষিত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে একটি পূর্নাঙ্গ ধারনা বা জ্ঞান লাভ করা যায়। আর এই পূর্নাঙ্গ ধারনা বা জ্ঞানকে ব্যবহার করে ঐ গবেষিত অঞ্চলকে শোষণের একটি প্রক্রিয়ার পথ সুগম হয়।  

 উন্নত সমাজ ও ইউরোপীয়নরা গবেষিত অঞ্চলের চাহিদার পাশাপাশি তাদের কাছে নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্যের ব্যবহারে সুবিধাসমুহ তুলে ধরার মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থা দখল করে।  এই বাজার দখলকে কেন্দ্র করে সেই অঞ্চলে এক ধরনে নতুন বিনিময় ব্যবস্থা নির্মান করেন।  আর এই বিনিময় হলো সেই অঞ্চলের কাঁচামাল সংগ্রহ করে এবং প্রযুক্তি দ্বারা প্রসেসিং  এর মাধ্যমে  উৎপাদিত পন্যদ্রব্যকে পূর্নরায় ঐ অঞ্চলে সাপ্লাই দেয়। কিন্তু চাহিদা তুলনায় এটি যখন প্রযুক্তি দ্বারা উৎপাদিত পন্যদ্রব্য পরিমান বেশি উৎপাদন হয় তখন আবার ঐ একই নৃবৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ করে বাজার দখল করে থাকে। 

এই বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহটা আরো বেশী তখন সহজলভ্য হয় যদি সেখানকার শাসন ব্যবস্থাকে হাতিয়ে নেওয়া যায়। আর এই শাসনব্যবস্থাকে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সেখানকার জনগোষ্ঠী বিশ্বাস ভাষা সংস্কৃতি সম্বন্ধে পূর্নাঙ্গ ধারনা থাকতে হবে যা নৃবিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে যেটি ইতিমধ্যে আমি বলার চেষ্টা করেছি। আর এই কৌশলগুলোকে বিভিন্ন তাক্তিকরা নামকরণ করেছেন সাম্রাজ্যেরবাদ, উপনিবেশবাদ, উত্তর আধুনিকতাবাদ ইত্যাদি। 


" মানুষ সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ জ্ঞান না থাকলে মানুষকে শাসন করা য়ায় না " - এটা নিয়ে আপনার ভাবনা কি? 


ধীমান ত্রিপুরা 

বি.এস.এস (অনার্স), এম.এ (নৃবিজ্ঞান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

0 Comments