Deman Tripura

এবার মদের ইস্যু, মদ কেন নিষিদ্ধ করা দরকার?

 এবার মদের ইস্যু, মদ কেন নিষিদ্ধ করা দরকার?

@ ধীমান ত্রিপুরা।  

ফটো: এআই ( AI) থেকে। 

আপনি জেনে অবাক হবেন কিনা জানি না, বান্দরবানের একটি গ্রাম রয়েছে ( সুয়ালক আমতলী তঞ্চগ্যা পাড়া), যেখানে মদকে নিষিদ্ধ করতে পেরেছে গ্রামবাসীরা, আমি যতোটুকু জানি এটি পত্রিকায়ও উঠছে,  মদ নিয়ে গ্রামের কেউ ঢুকা যাবে না, কেউ মদ বোতল নিয়ে গ্রাম ঢুকলে শাস্তি স্বরুপ ১১০০ কলস  নদী বেয়ে পানি এনে বটমুলে ঢালতে হবে  আরো রয়েছে ১১০০ টাকার জরিমানার আয়োজন। বিয়ের অনুষ্ঠান হতে শুরু করে সবজায়গায় ঐ গ্রামে মদ বন্ধ।  একান্ত পেটে মদ না পরলে যাদের ছটফটানি হয় তারা গ্রামের  বাইরে মদ খেয়ে এলাকায় ঢুকতে পারবে............

তাই মদ বন্ধ করা যাবে না, কমানো যাবে না, ধর্ম পালন করে না অথচো মদ খাওয়ার জন্য ধর্মের অজুহাত দেয় এবং আমাদের লক্ষী চুমলাই কাথারক দেবদেবী কখনো মদ খায় কিনা জানি না , কিন্তু   দেবদেবীকে মদ দিয়ে উৎস্বর্গ করে মানুষ যারা মদ খায় তাদের উদ্দেশ্য কিছু আমানবিক কথা- 

চলুন একটু দেখি মদ নিয়ে আমার একটি ছোট ভাবনা। আদিমযুগের  বিনোদনের কেন্দ্র নেশাজাতিয় হিসেবে পরিচিত একটি তরল পানি হলো মদ। তখনকার সময়ে পশু স্বীকারের পর বিজয় উল্লাসের জন্য  নেশা বা মাতাল হওয়ার বিনোদন এর উপকরণ হিসেবে মদকে গ্রহন করতো। পরবতর্তীতে বিনোদনের অংশ হিসেবে যোগ হলো আরো নানান বাজনা শব্দ, গান। সমাজে এক শ্রেনি মদকে বিনোদন হিসেবে আর কল্পনা করলো না, তারা গান শিল্পকলা নান্দনিক বিষয়গুলোকে বিনোদন হিসেবে গ্রহণ করতে লাগলো, এমনকি আধুনিক পর্যায়ে এসে মোবাইল ফোন মেমোরি কার্ড, সাউন্ড বাক্স বিনোদন কেন্দ্র পরিনত হলো, সাথে বিনোদনের মাত্রা হিসেবে নানান খেলাধুলা যোগ হলো, তরল পানি নতুন বের হলো স্পিড, কোকাকোলা, ম্যাংগু জুস নানান  তরল জিনিস। একই সাথে ধনীদের ওয়াইন বিয়ার। এভাবে বিনোদনের উপকরণ মানুষ পাল্টাতে থাকলো.....()

আদিম বা মধ্যেযুগের  সাধারন পানি ব্যাতীত মাতাল হওয়ার জন্য   একমাত্র যে জিনিস বানানো রপ্ত করছে সেটি হলো মদ। সেই মদকে ত্রিপুরারা আদিবাসীরা পূজাতে কেন সংযুক্ত করছে? কেন বিকল্প চিন্তা করতে পারলো না?  তার আগে একটু দেখি, আদিম যুগে মানুষ কেন পূজা করে। বিজ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ সেখান থেকে ধর্মচর্চা শুরু। মানুষ সব ঘটনার কারন ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারছে না বলে ধর্মে শরানপন্ন হচ্ছে।  আদিম যুগে মানুষের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা করা ক্যাপাবিলিটি আরো সীমাবদ্ধ ছিল। এই ব্যাখ্যা সীমাবদ্ধতার জায়গায় থেকে যে বস্তুকে পূর্জা অর্চনা করে আত্মতৃপ্তির লাভ করে ঠিক ঐ মুহুর্তে বিনোদনের মত্ত হওয়ার জন্যই তারা পূজা পার্বনে মদকে যুক্ত করেছে, মদ ছাড়া তারা যদি স্পিড কোকাকোলা বানানো নলেজ অর্জন করতে ঐ সময়ে  তাহলে  সেটি একেবারে  মিশাবেনা তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। 

তাই আধুনিক পর্যায়েও এসে পূজা পার্বনে মদ মেশানো  এটি বাধ্যতামুলক এমন ধারনা পোষন করা নিছক বোকামি। পূজার ধরন পরিবর্তন হলো দূধ আসলো, ফুল আসলো, ধুপ মোমবাতি আগরবাতি,  কত কিছু পরিবর্তন হলো.... সংস্কার হলো। কিন্তু আমরা মদ পরিবর্তন করে সংস্কার ও পরিশুদ্ধ হতে পারে নি। এভাবে মাতাল ও অজ্ঞদের হাতে ত্রিপুরাদের পবিত্র ধর্মটা বন্ধি হয়ে আছে। বন্ধিশালায় থেকে ত্রিপুরাদের ধর্মকে  উন্মোচন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুন সাবেক স্টুডেন্টরাই  কিংবা নতুন প্রজন্মরাই পারবে.........


ধীমান ত্রিপুরা 

বি.এস.এস ( অনার্স), এম.এস.এস (নৃবিজ্ঞান),  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

Post a Comment

1 Comments

  1. "দেবদেবী কখনো মদ খায় কিনা জানি না , কিন্তু দেবদেবীকে মদ দিয়ে উৎস্বর্গ করে মানুষ যারা মদ খায়" এটা ভালো লেগেছে

    ReplyDelete